উৎপত্তি (৫৭০–৬৩২ খ্রিস্টাব্দ)
ইসলামের সূচনা হয় আরবের মক্কায়, যখন মুহাম্মদ (সা.) ৬১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ওহি পান। এই ওহি কুরআনে সংকলিত হয়, যা একত্ববাদ ও নৈতিক জীবনের উপর জোর দেয়। মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় প্রচার করেন, কিন্তু বিরোধিতার মুখে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন (হিজরি সনের শুরু)। মদিনায় তিনি মুসলিম, ইহুদি ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে একত্রিত করে একটি সম্প্রদায় গড়েন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মক্কা জয় করেন এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর সময় অধিকাংশ আরব ইসলাম গ্রহণ করে।
রাশিদুন খিলাফত ও শিয়া-সুন্নি বিভেদ (৬৩২–৬৬১ খ্রিস্টাব্দ) মুহাম্মদ (সা.)
এর মৃত্যুর পর আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী খলিফা হন। তারা সিরিয়া, মিশর ও পারস্য জয় করেন। নেতৃত্ব নিয়ে মতপার্থক্য শিয়া-সুন্নি বিভেদের সূচনা করে। সুন্নিরা আবু বকরকে সমর্থন করে, শিয়ারা আলীকে মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরাধিকারী মানে। উসমানের হত্যা (৬৫৬) ও কারবালার যুদ্ধে (৬৮০) হুসায়নের শাহাদত এই বিভেদকে স্থায়ী করে। আজ সুন্নিরা ৮৫–৯০%, শিয়ারা ১০–১৫%।
উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগ: সম্প্রসারণ ও স্বর্ণযুগ (৬৬১–১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ)
উমাইয়া খিলাফত (৬৬১–৭৫০): দামেস্ক থেকে তারা স্পেন, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ায় ইসলাম ছড়ান। আরবি প্রশাসনের ভাষা হয়, কিন্তু অ-আরব মুসলিমদের বৈষম্য অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
আব্বাসীয় খিলাফত (৭৫০–১২৫৮): বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তর। এটি ইসলামের স্বর্ণযুগ (৮ম–১০ম শতাব্দী)। বাগদাদের হাউস অফ উইজডম-এ গ্রিক, পারসিক ও ভারতীয় জ্ঞান অনুবাদ হয়। আল-খোয়ারিজমি বীজগণিত, ইবনে সিনা চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান রাখেন। সুফিবাদের উত্থান হয়, রুমির কবিতা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে। বাণিজ্যের মাধ্যমে ইসলাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় ছড়ায়। মধ্যযুগ: ক্রুসেড, মঙ্গল আক্রমণ ও নতুন সাম্রাজ্য (১০০০–১৫০০ খ্রিস্টাব্দ) ক্রুসেডে (১০৯৫–১২৯১) সালাহউদ্দিন জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। মঙ্গলরা ১২৫৮ সালে বাগদাদ ধ্বংস করে, কিন্তু পরে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করে। বাণিজ্য ও সুফি মিশনারিদের মাধ্যমে ইসলাম মালি, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে ছড়ায়s। আল-আজহারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের কেন্দ্র হয়। ইসলামী শিল্প, জ্যামিতিক নকশা ও ক্যালিগ্রাফি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।
প্রাথমিক আধুনিক সাম্রাজ্য (১৫০০–১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)
অটোমান সাম্রাজ্য: কনস্টান্টিনোপল (১৪৫৩) জয় করে, সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের সময় তিন মহাদেশে বিস্তৃত। মসজিদ ও সাহিত্যে অবদান রাখে।
সাফাভিদ সাম্রাজ্য: পারস্যে শিয়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে, ইসফাহান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়।
মুঘল সাম্রাজ্য: আকবর ধর্মীয় সহনশীলতা প্রচার করেন, তাজমহল নির্মাণ করেন।
আধুনিক যুগ: ঔপনিবেশিকতা, সংস্কার ও সমসাময়িক ইসলাম (১৮০০–বর্তমান) ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা মুসলিম ভূমি বিভক্ত করে। মুহাম্মদ আবদু ইসলামের আধুনিকীকরণের চেষ্টা করেন, ওয়াহাবি আন্দোলন মৌলিকতার দিকে ঝোঁকে। ১৯২৪ সালে খিলাফত বিলুপ্ত হয়। স্বাধীনতার পর পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ গড়ে ওঠে। মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইরানের ইসলামী বিপ্লব (১৯৭৯) ইসলামী শাসনের চেষ্টা করে। আল-কায়েদা, আইএসআইএস-এর মতো গোষ্ঠী সহিংসতা ছড়ায়, যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান করে। বর্তমানে ১৯০ কোটি মুসলিম বিশ্বের ২৪% জনসংখ্যা, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারতে বেশি।
মুসলিমদের অবদান
বিজ্ঞান: আল-বিরুনি পৃথিবীর পরিধি গণনা করেন, ইবনে হায়সাম আলোকবিদ্যায় অবদান রাখেন।
সাহিত্য: রুমি ও ওমর খৈয়ামের কবিতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।
স্থাপত্য: কর্ডোবার মসজিদ, তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্য।
বৈচিত্র্য ও চ্যালেঞ্জ
ইসলাম স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে মিশে বৈচিত্র্যময়। ইন্দোনেশিয়ার জাভানিজ ইসলাম বা মরক্কোর বারবার ঐতিহ্য এর উদাহরণ। মুসলিমরা নারীর অধিকার, গণতন্ত্র ও ইসলামোফোবিয়ার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, তবে সংলাপ ও শিক্ষার মাধ্যমে অবদান রাখে।
No comments:
Post a Comment